মারাত্মক সেশন জটে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-স্বপ্নভঙ্গ লাখো শিক্ষার্থীর- nkstudycare.com








২০২২ সালে এসেও হুমকির মুখে ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত

২০০৬-০৭ থেকে শুরু করে ২০১৩-১৪ সাল,
দীর্ঘ ৭ বছর সেশন জটের সাথে লড়াই করে অবশেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বস্তির দেখা মেলে ২০১৪-১৫ সাল থেকে। দীর্ঘ বহুবছর শিক্ষার্থীদের লালিত স্বপ্নকে সমাহিত করে সবেমাত্র স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরেছিলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।


স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলো ২০১৫ সালে প্রকাশিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার। যেখানে আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্সের নাম শোনা মাত্রই মস্তিষ্ক সিগন্যাল দিয়ে জানিয়ে দিতো মিনিমাম ৬/৭/৮ অধিকন্তু ৯ বছর ও লেগে যাবে শেষ হতে সেখানে ২০১৪ সালের পরে নিয়মিত ৪ বছরেই শেষ হতে শুরু হয়েছিলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কোর্স। হাজারো শিক্ষার্থীর মুখে স্বপ্নভঙ্গের খরা কাটিয়ে ফুটতে শুরু করেছিলো অনাবিল হাসি।


কিন্তু হাসির স্থায়িত্বকে যেনো এক পলকেই গ্রাস করে নিয়েছে মহামারি করোনা ভাইরাস। চিরতরেই সমাহিত করে দিয়েছে শেষ বয়সে থাকা চাকরি প্রত্যাশিদের জীবন।


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারাদেশে আড়াই হাজারের বেশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজ রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী।


২০২০ সালের অনার্স ৩য় বর্ষ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফল দেখতে ক্লক করুন


করোনা পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থীর ওপর ‘সেশনজট’র বোঝা অভিশাপের মতো আবির্ভূত হয়েছে। বিভাগ ভেদে সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে ৩ বছরের সেশনজটের ও আশঙ্কা রয়েছে। একটি শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষায় জট দেখা দিলে প্রত্যেকটি ব্যাচেই তার প্রভাব পরে।


উপরমহল থেকে বুঝানো হচ্ছে এ যেনো মহামারি করোনার কারনেই সৃষ্টি সমস্যা। করোনার দোহাই দিয়েই যেনো ঢাকতে চাচ্ছে নিজেদের অসমর্থতা। অথচ বহির্বিশ্বসহ আমাদের দেশের পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত সাত কলেজ,কারিগরি কলেজ এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও করোনার মধ্যে পরীক্ষা অথবা প্রমোশনের মাধ্যমে সেশনজট মুক্ত রেখেছে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা।


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে-
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি শেষে ১১ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর-ই শুরু হয়েছিলো ১ মর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ক্ষেত্রেও একই পথে হেঁটেছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।  ক্লাস শুরুর পরবর্তী ৯ মাসেই ফাইনাল পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয় এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা ও শুরু হয়েছিলো। সঠিক পথেই হাঁটছিলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। খুব বেশি খুশি হয়ে যাবেন না এই পরিসংখ্যান দেখে।


চলুন দেখে নেয়া যাক বর্তমান পরিসংখ্যান কি বলে-
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ যাদের কিনা ২০২১ সালে অনার্স কোর্স সম্পন্ন হবার কথা তাদের ৩য় বর্ষের ফলাফল ও এখনো প্রকাশিত হয়নি। অর্থাৎ ২০২১ এ অনার্স শেষ হবার পরিবর্তে ২০২২ এর শেষ দিক চলমান অথচ এখনো ৩য় বর্ষের ফলাফল ই প্রকাশিত হয়নি।


২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ২০২২ সালে অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষা হবার কথা থাকলেও এখনো প্রকাশিত হয়নি ২য় বর্ষের ই ফলাফল।  অর্থাৎ এখনো ১ম বর্ষের ফলাফল ই আছে নিজের ঝুলিতে। যেখানে ২০২২ সালে হবে ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা হবার কথা সেখানে নিজেদের দখলে রয়েছে মাত্র ১ম বর্ষের ফলাফল।


প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান এখন একই রকম। এটি শুধুমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষা বর্ষের সাথে যারা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ ছিলো তাদের কোর্স ইন্টার্নশিপসহ শেষ হয়েছে। একই শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত সাত কলেজ ও রয়েছে ৩য় বর্ষের শেষের দিকে। 


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বৈষম্যের দায়ভার কে নিবে? এই বিষয়ে প্রশ্ন তুললেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। অথচ মাত্র ছয় দিনের মাথায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রির ফল প্রকাশেরও রেকর্ডও গড়েছিলেন প্রয়াত ভিসি অধ্যাপক ড. আফতাব আহমাদ।

৩ বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্সেরও একই অবস্থা। এখানেও প্রায় ৬ বছরের সেশন জটের আশংকা। অনার্স আর পাস কোর্সে যখন সেশনজট তখন স্বাভাবিক ভাবেই মাস্টার্সেও সেই জট আর পিছু ছাড়বে না।


প্রফেশনাল কোর্স তথা বিএড, এমএড, এলএলবি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন সেশনে ১ম, ২য় এবং তৃতীয় সেমিস্টারের ভিবিন্ন পার্টের পরীক্ষা ৮ মাস থেকে ১০ মাস হয়ে গেলেও এখনও ফলাফল প্রকাশের দিনক্ষণ বলতে পারে না পরীক্ষা দফতর।


উচ্চতর ডিগ্রিরও বেহাল দশা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমফিল, পিএইচডি প্রোগ্রামের অবস্থাও বর্তমানে আরও করুণ।


২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আর এতেই দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে একই বর্ষে অধ্যয়নরত রয়ে গেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত শিক্ষার্থীরা। যেখানে অন্যান্য প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, সেদিকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।


করোনা ভাইরাস প্যারাগ্রাফ বাংলা অর্থসহ পড়তে এখানে ক্লিক করুন


নাম মাত্র অনলাইন ক্লাস হলেও পরীক্ষার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ক্লাস কিংবা কোন পরীক্ষা ছাড়াই অনার্স প্রথম ও দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে অটো প্রমোশন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ এর সুফল সম্পর্কে এখন এক লাইন ও বলতে পারছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা।


এ ধরনের অবস্থার মধ্যে শিক্ষার্থীদের পড়তে হতো না। তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যেতো না মূল্যবান সময়। ধ্বংস হতো না শিক্ষার্থীর ব্যক্তি, পরিবারিক ও অর্থনৈতিক জীবন। ছিটকে পড়তে হতো না রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে যদি সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া যেতো।


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈষম্য চাই না,সমান অধিকার চাই। একই সেশনে পড়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে,চাকরি ক্ষেত্রে সুযোগ পাবে এটা হতে পারে না। হয় বৈষম্য বন্ধ করুন না হয় চাকরির বয়স বিবেচনা করে দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত জানান। এটি এখন সময়ের দাবী।

নবীনতর পূর্বতন

Ads

Ads